জিদানের ধারে কাছেও কেউ নেই

খেলোয়াড়ি জীবনে খুব একটা ভাগ্যবান ছিলেন না তিনি। ২০০৬ বিশ্বকাপে একক প্রচেষ্টায় ফ্রান্সকে ফাইনালে তুললেও একটা মূহুর্তের কাছে হেরে গিয়ে সব জলাঞ্জলি দিতে হয় জিনেদিন জিদানকে। ওই বিশ্বকাপটা তিনি পেয়ে গেলে হয়তো তাঁকেই সবাই সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মেনে নিতো। ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালেও জুভেন্টাসের অন্যতম সেরা দল নিয়ে হেরেছিলেন ধুঁকতে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। এরপরে রিয়াল মাদ্রিদে আসলেও এত সব তারকা খেলোয়াড় নিয়েও কেবল একটি লা-লীগা আর একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। খেলোয়াড়ি জীবনে ভাগ্যদেবী তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও কোচিং ক্যারিয়ারে যেন ভাগ্যদেবী দু’হাত ভরে দিচ্ছেন জিদানকে।
শনিবার কিয়েভে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে লিভারপুলের মুখোমুখি হয় জিদানের রিয়াল মাদ্রিদ। লিভারপুলকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের ১৩ তম চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতে নেয় জিদানের শিষ্যরা। কোচ হিসেবে এটি ছিলো জিদানের তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা যা আবার তার টানা তৃতীয়।
২০১৬ সালে মৌসুমের মাঝপথে রিয়ালের দুঃসময়ে দলের দায়িত্ব নেন ফরাসি কিংবদন্তি। তখনই যেন পণ করেছিলেন খেলোয়াড়ি জীবনের সকল অপূর্ণতা তিনি ঘুচিয়ে দেবেন কোচিং ক্যারিয়ারে। সেই থেকে তাঁর সাফল্যের জয়যাত্রা চলছেই। কোচিং ক্যারিয়ারে মাত্র আড়াই বছরেই নয় নয়টি শিরোপা উপহার দিয়েছেন তিনি রিয়াল মাদ্রিদকে। যার মাঝে রয়েছে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং একটি লা লীগা শিরোপা।
ইতোমধ্যেই স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন, পেপ গার্দিওলা এবং হোসে মরিনহোর মত কিংবদন্তি কোচদের পেছনে ফেলেছেন জিদান। তাদের প্রত্যেকেই এতো বছর ধরে কোচিং করিয়েও দুইটির বেশি চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জিততে পারেননি। এখানেই অনন্য জিদান। নিজের প্রথম তিন সিজনেই জিতে নিয়েছেন তিনটি চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা। সেই সাথে চ্যাম্পিয়নস লীগ নামকরণের পর টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা দলের কোচও তিনি। সত্তরের দশকে সর্বশেষ এ কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছিলো বায়ার্ন মিউনিখ। হয়তো এর মাধ্যমেই সর্বকালের সেরা কোচদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঢুকে গেলেন এ ফরাসি কিংবদন্তি। সাফল্যের বিচারে চ্যাম্পিয়নস লীগের সর্বকালের সেরা কোচও বলা যায় তাঁকে। তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ এখন পর্যন্ত তিনি ছাড়া কেবল দু’জন কোচ পেরেছেন অর্জন করতে। তাঁরা হলেন কার্লো অ্যানচেলোত্তি এবং বব পেইসলি। তবে কেউই তাঁর মতো এতো দ্রুত সাফল্য পাননি। আসলে ইতিহাসেই কোচ হিসেবে এতো দ্রুত এতো সাফল্য কেউই পায়নি।
তবে এতো অর্জনের পরও নিজেদের খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব স্বীকারে ভোলেননি রিয়াল মাদ্রিদ কোচ। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের অংশ হতে পেরে আনন্দিত বোধ করছি। এখন সময় উপভোগ করার। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর আমি যা করেছি তা শুধু ধারাবাহিকতা। কোচ হিসেবে শুরু করার পরই দেখেছি আমাদের খেলোয়াড়েরা দারুণ। এতে কোন গুপ্ত রহস্য নেই। সবই পরিশ্রমের ফসল। আমাদের ভালো খেলোয়াড় রয়েছে বটে কিন্তু তার পেছনেও কাজ করেছে পরিশ্রম।’
খেলোয়াড় জিদানকে ইতোমধ্যেই অমরত্ব অর্জন করেছেন। এতো সব দুর্ভাগ্যের পরও তাঁকে সর্বকালের সেরা একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোচ হিসেবেও অমরত্বের দিকে হাঁটছেন খেলোয়াড়ি জীবনে দুর্দান্ত থাকা জিদান। মাত্র তো শুরু। আর কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুতেই যা জিতে ফেলেছেন তা হয়তো অনেক কোচের পুরো কোচিং ক্যারিয়ারের স্বপ্ন। সময় এখনো বাকিই রয়েছে জিদানের জন্য। দেখা যাক সর্বকালের সেরা কোচ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন কিনা এ ফরাসি কিংবদন্তি।
Share on Google Plus

About bengalismsnew

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

loading...